Cultural Interlocutary

Cultural Interlocutory

ACTIVISM SOCIAL SCIENCE CLUB – এর উদ্যোগে গত ৮ই জুলাই ২০১৭ তে অনুষ্ঠিত হয় রবীন্দ্র-নজরুল সন্ধ্যা। তবে যে গতানুগতিক ধারায় রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী পালিত হয়, ACTIVISM তাকে অতিক্রম করে এক অনন্য ধারায় তা উপস্থাপন করেছে। তাই অবশ্যই এই সন্ধ্যার বিশেষত্ব সকলের নজর কেড়েছিল তা বলাই বাহুল্য।
এই সন্ধ্যার উদ্বোধন হয় অপূর্ব দত্তের ‘দুইবাংলা’ কবিতা এবং ভূপেন হাজারিকা-র ‘সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ চেতনাতে নজরুল’ গানটির মধ্য দিয়ে। পরিবেশনায় ছিলেন ACTIVISM এর সদস্য তিয়াস রায় এবং শ্রেয়সী ঘোষ,তবলায় সঙ্গতে ছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ বিভাগের শিক্ষক দীনেশ ধীবর মহাশয় এবং হারমনিয়াম সঙ্গতে ছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ বিভাগের শিক্ষক দীনেশ পাল মহাশয়।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বের পরেই ACTIVISM SOCIAL SCIENCE CLUB এর আহবায়ক ডঃ সৌরীশ ঝা মহাশয় ACTIVISM এর পক্ষ থেকে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন। যেখানে তিনি উপস্থিত সকল দর্শকবৃন্দ কে ধন্যবাদ জানান এবং এই সন্ধ্যার বিশেষত্ব সম্পর্কে অবহিত করে একটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি মূলত এই অনুষ্ঠানের অনন্য ভাবনা এবং এই ভাবনার সঙ্গে ACTIVISM এর সার্বিক কর্মকান্ডের সাজুয্য বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও তিনি বর্তমানে সারা বিশ্বে অসহিষ্ণুতার বাতাবরণে এই সন্ধ্যার ভাবনার প্রাসঙ্গিকতা কতটা সেই বিষয়েও দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।
সন্ধ্যার এই অনুষ্ঠানে কিছু বিশিষ্ঠ ব্যক্তি আমাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। আমাদের মধ্যে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন CESTUSS এর সাধারণ সম্পাদক অশোক মুখোপাধ্যায় মহাশয়। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যবিভাগের অধ্যাপক শুভাষিশ হালদার মহাশয় এবং সন্মানীয় অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ বিভাগের শিক্ষক দীনেশ ধীবর মহাশয়। তাঁদের মঞ্চে আসন গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান হয় এবং ACTIVISM এর পক্ষ থেকে ডঃ পাপিয়া সেনগুপ্ত মহাশয়া মেমেণ্টো সহযোগে তাঁদের বরণ করে নেন। প্রধান অতিথি অশোক মুখোপাধ্যায় মহাশয়কে পুষ্পস্তবক সহযোগে বরণ করে নেন ACTIVISM এর সদস্য সোমা ভট্টাচার্য, বিশেষ অতিথি অধ্যাপক শুভাষিশ হালদার মহাশয়কে পুষ্পস্তবক সহযোগে বরণ করে নেন ACTIVISM এর সদস্য সুদীপ্তা দাস এবং সন্মানীয় অতিথি দীনেশ ধীবর মহাশয়কে পুষ্পস্তবক সহযোগে বরণ করে নেন ACTIVISM এর সদস্য জুঁই রাউথ।
বরণপর্বের পরেই এই সন্ধ্যার বিশেষ অতিথি অধ্যাপক শুভাষিশ হালদার মহাশয় একটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য পরিবেশন করেন। যার মূল বক্তব্যই ছিল বর্তমান সমাজের এমন অসহিষ্ণু পরিবেশে এই সন্ধ্যার ভাবনার প্রাসঙ্গিকতা এবং একসাথে হাতে হাত রেখে কাজ করার জন্য মানুষের মধ্যে সহনশীলতা গুণটির উপস্থিতি কতটা মূল্যবান তা তিনি তার বক্তৃতার মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তোলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি অশোক মুখোপাধ্যায় মহাশয় একটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য পরিবেশন করেন। তিনি বলেন রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল যে সহিষ্ণুতার ভাবনা বহু দশক পূর্বে বপন করে গেছেন তা মানুষ আজও সর্বান্তকরণে গ্রহণ করতে পারেননি। আর পারেননি বলেই আজ একবিংশ শতাব্দীতেও জাতপাত-ধর্ম কে কেন্দ্র করে হানাহানি অব্যহত। তিনি বলেন যে পশ্চিমি সভ্যতা তার ঞ্জান চর্চার মধ্যে দিয়ে এই অন্ধকারময় অবস্থা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে যদিও আমরা তা পারিনি । তাই তিনি আমাদের কাছে আবেদন করেছেন যে,রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল কে শুধুমাত্র পাঠের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে তাদের ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে,প্রয়োগ করতে যাতে জাত-ধর্ম,ভাষা,বর্ণ প্রভৃতিকে কেন্দ্র করে যে হানাহানি তার একদিন অবসান ঘটে। তিনি বলেন আত্মকেন্দ্রিক না, অন্যের ভাবনাকে প্রাধান্য দেওয়া এবং শ্রদ্ধা করার নামই হল সহিষ্ণুতা।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্যায়ের পর আমরা পৌঁছে যাই অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্যায়ে। যেখানে সহিষ্ণুতার ভাবনাকে কেন্দ্র করে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রথমেই অনুষ্ঠিত হয় “তবলার লহরা”, পরিবেশনায় ছিলেন প্রীতম ধীবর এবং হারমনিয়াম সঙ্গতে ছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ বিভাগের শিক্ষক দীনেশ পাল মহাশয়। তবলার লহড়ার শেষে অনুষ্ঠিত হয় গীতি আলেখ্য ‘বাঁধ ভেঙে দাও’। যার নির্দেশনায় ছিলেন ডঃ পাপিয়া সেনগুপ্ত, রচনায় শ্রেয়সি ঘোষ,পরিবেশনায় ACTIVISM এর সদস্যবৃন্দ,যথা ভাষ্যপাঠে বুদ্ধদেব লাহা এবং সোমা ভট্টাচার্য,কবিতাপাঠে সুদীপ্তা দাস এবং গানে সোমা ভট্টাচার্য,শ্রেয়সি ঘোষ এবং সুদীপ্তা দাস,তবলার সঙ্গতে ছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ বিভাগের শিক্ষক দীনেশ ধীবর মহাশয় এবং হারমনিয়াম সঙ্গতে ছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ বিভাগের শিক্ষক দীনেশ পাল মহাশয়। গীতি আলেখ্যের সূচনা হয় নজরুল গীতি “কান্ডারি হুঁশিয়ার”…….. এর মধ্য দিয়ে। তারপর নজরুল গীতি “মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান” গানটি পরিবেশিত হবার পরই পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রনাথের কবিতা “অপমানিত”। তারপর পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রসঙ্গীত “আমি চিত্রাঙ্গদা……..আমি রাজেন্দ্র নন্দিনী” এবং সর্বশেষে নজরুলের “সাম্যবাদী” কবিতা পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় গীতি আলেখ্য ‘বাঁধ ভেঙে দাও’।
গীতি আলেখ্যের শেষে শুরু হয় নৃত্যানুষ্ঠান,পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রনৃত্য “আমার মুক্তি আলোয় আলোয়”, পরিবেশনায় ACTIVISM এর সদস্য ঋতুপর্না ভট্টাচার্য এবং নজরুলের “কারার ওই লৌহ কপাট” গানে পরিবেশিত হয় আরও একটি নৃত্য, পরিবেশনায় ACTIVISM এর সদস্য রায়া ভট্টাচার্য।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ছিল এক বিশেষ আকর্ষন। সহিষ্ণুতার আলোকেই মঞ্চস্ত হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ছোটোগল্প “মুসলমানির গল্প” অবলম্বনে নাটক “মেহেরজান”।নির্দেশনায় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যবিভাগের অধ্যাপক শুভাষিশ হালদার মহাশয়, নাট্যরূপ তিয়াস রায়, সামগ্রিক তত্ত্বাবধানে ACTIVISM এর আহবায়ক ডঃ সৌরীশ ঝা মহাশয়। অভিনয়ে ACTIVISM এর সদস্যবৃন্দ কৌশিক মন্ডল,সুস্মিতা চৌধুরী, সৌরভ বাগ,তিয়াস রায়, জুঁই রাউথ, ইন্দ্রনীল পাল, শেখ সালমান,বুদ্ধদেব লাহা,প্রসাদ নষ্কর এবং সঞ্চিতা দে।
এই সন্ধ্যার সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা ও আলোক-সজ্জা এর দায়িত্বে ছিলেন ACTIVISM এর সদস্য জয়ন্ত ঘোষাল এবং শব্দ গ্রহণে ছিলেন ACTIVISM এর সদস্য বিপ্লব মাঝী।
সবশেষে একথা বলতেই হয় যে, ACTIVISM এর চলার শুরু খুব বেশীদিন আগের কথা নয়,তবে এই কিছুদিনের মধ্যেই স্বল্প লোকবল এবং অর্থবলকে ভরসা করে এমন একটি অভিনব ধারায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রয়াস আর একবার ACTIVISM এর ঝুলিতে ভরে দিয়েছে সাফল্য এবং এগিয়ে চলার উদ্যম।

প্রতিবেদনে – সঞ্চিতা দে

Open chat
1
How Can I Help You
How Can I Help You