প্রেতাত্মা

বর্তমান যুগ বিজ্ঞানেরতাই ভূত টুতে কেউ সেরকম বিশ্বাস বা ভয় কোনটাই করেনা তবুও মনের মধ্যে থেকে যায় একটি আগ্রহকৌতূহল “ আদেওভূত আছে ?” এই গল্প সেই রকম কিছুটা কৌতূহল  আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবার জন্য সে অনেককাল আগের কথাউনিশ শতকের মধ্যভাগে এক ভারতীয় ব্রিটিশ শাসনাধীন থাকা মিলিটারিতে যোগদান করেনতিনি ছিলেন বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার এক গ্রামের বাসিন্দা তিনি কর্মস্থল থেকে  তার পরিবারের সঙ্গে চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ করতেনতার নাম ছিল কৃষ্ণগোপাল রায় তার এই মিলিটারিতে যাওয়া নিয়ে তার পরিবারের অভিযোগের অন্ত ছিল নাকৃষ্ণগোপাল তার বাড়ির আসেনি প্রায় নয় মাস হতে চললতার পরিবার থেকেও চিঠি আসা বন্ধ হয়েছে প্রায়  মাস এতে তার বাবা লিখেছিলেন, “কৃষ্ণগোপালঅনেকদিন হয়ে গেছে তুমি গ্রামে আসোনিতোমার মা, স্ত্রী অনুরোধে তোমাকে এই চিঠি লেখা আশা করছি তুমি ভালো আছো মা তোমার পরিবারের প্রতি কর্তব্য বলে যদি কিছু থাকে তাহলে অবশ্যই এসো” অতপর লাহোর থেকে কৃষ্ণগোপাল একদিন মানি অডার নিয়ে তার বাবাকে চিঠি লেখেন বাবা আমি আগামীকাল বাড়ি ফিরছি।
রঘু কাকাকে আমার জন্য স্টেশনে অপেক্ষা করতে বলরঘু কাকা হল কৃষ্ণগোপালের  বিশ্বস্ত  পুরনো চাকর নির্দিষ্ট দিনে কৃষ্ণ গোপাল রাত ১২:৩০ মিনিটে স্টেশনে নামলেনস্টেশন মাস্টার জিজ্ঞাসা   করলেন “ ওহে কোথায় যাবে”। কৃষ্ণগোপাল উত্তর দিলেন, “আমি থাকি বাঁকুড়ায়সেখান থেকেই আমাকে নিতে আসার কথা ছিল একজনের” স্টেশন মাস্টার বলেন, “এখন তো কাউকে আসতে দেখিনিযাই হোক তুমি আজ রাতটা প্লাটফর্মে কাটিয়ে দাও। কাল সকালে পারলে তোমার জন্য কিছু ব্যবস্থা করে দেব
কৃষ্ণ গোপাল কোন উপায় না বুঝে প্ল্যাটফর্মেই আশ্রয় নিতে বাধ্য হন  প্ল্যাটফর্মে বসে চোখ বন্ধ করে ঘুমোতেই কে যেন  তাকে ডাকলো দাদাবাবু দাদাবাবু
চোখ খুলে কৃষ্ণ গোপাল সসামনে তাকে বলেনআরে রঘু কাকাআমি ভেবেছিলাম তুমি বোধ হয় আমার ওপরে রাগ করে আমাকে নিতে আসো নি “কি যে বলেন দাদা বাবু আপনি সময়ের উল্লেখ না করায় আমি নদীর গাড়ি রেখেছিযাইহোক এখন চলুন” বলল রঘুকাকা  সারাদিনের ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেলেন তারপর যেইনা রঘু কাকা গরুর গাড়িটা চালাতে শুরু করলসে আর থামার নামই নেয় না সে গরুর গাড়িকে একেবারে ঘোড়ার গাড়ির মতো তাতে শুরু করলো কৃষ্ণ গোপাল ভয়ে ভয়ে তাকে বললেন, “একি করছোআমি তো পড়ে যাব সাবধানে” কিন্তু কে শুনে কার কথাএরকম করেই কৃষ্ণগোপাল তার বাড়িতে পৌঁছালেন বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে রঘু কাকা বিদায় নিল দরজায় কড়া নাড়তেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন বয়স্ক এক ভদ্রলোক ইনি কৃষ্ণগোপালের বাবা
দরজা খুলতেই তাকে বলেন, “তোমার চিঠি আমরা সময় মতোই পেয়েছি কিন্তু সময় তুমি আসবে তা না জানতে পারায় কোন গাড়ি পাঠাতে পারিনি” কৃষ্ণগোপাল বললেন, “কি বলছেন বাবারঘু কাকা তো গেছিল আমায় আনতে” “ কি কিরঘুতুমি ঠিক বলছো তো?”, “হ্যাঁ কিন্তু আপনি এত অবাক হচ্ছেন কেন?” “তা সে ভালই করেছে তোমাকে এনে অনেক দিনের বিশ্বস্ত লোকওর কাজও করেছে সত্যি কথা বলতে কৃষ্ণ আর বেঁচে নেইদুতিন মাস হয়েছে সে মারা গেছে” কৃষ্ণ গোপাল বিস্মিত সরে বলল, “ মা – মা – মারা গেছে” “ হ্যাঁযাই হোক তুমি ঘরে গিয়ে হাত পা ধুয়ে খেতে বসো” বললেন তার বাবা 
কৃষ্ণগোপালের স্ত্রীতার সম্মুখে তার পছন্দের সব খাবার এনে হাজির করলেন তা দেখে কৃষ্ণ গোপাল বললেন, “একি করেছোএতকিছু করার কি দরকার ছিল?” কৃষ্ণ গোপালের শ্রী চুপচাপ বসে রইলেনকৃষ্ণ গোপাল খাওয়া দাওয়া যেই বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিলেনঅমনি সারাদিনের সব ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেতেই কি তার ঘুম পেয়ে গেল পরদিন তার ঘুম ভাঙলো চিৎকারে তিনি খুলে দেখেন অর্ধভঙ্গ ঘরে তিনি শুয়ে আছেন। তিনি বিছানা থেকে উঠে তাড়াতাড়ি বাইরে গিয়ে প্রতিবেশীদের কাছে গলায় বলে উঠলেন, “একিআমার ঘরের এই অবস্থা হল কি করে? ” প্রতিবেশীরা বলেন, “ওরে কৃষ্ণ তুই কি কিছুই বুঝতে পারছিস নাআর  মাস হয়েছে তোর পুরো পরিবার কলেরায় উজাড় হয়ে গেছে তারা কেউ আর বেঁচে নেই তোর কর্মস্থল সম্বন্ধে না জানাই তোকে কোন চিঠি লিখতে পারিনি
কৃষ্ণগোপাল গতকাল রাত্রের কথা তাদেরকে জানালো। তারপর  দিন থেকে কর্মস্থলে ফিরে যায় 

Picture Courtesy: Pixbay

Name- Swarnava Dey, Age – 16, Class – X, Institution – Shyambazar A.V. School. ​
Open chat
1
How Can I Help You
How Can I Help You